বিষয় ঃ তাওহীদ
অধ্যায় ০১ ঃ আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলের সৃষ্টিকর্তা।
অধ্যায় ০২ ঃ আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলের একমাত্র সার্বভৌম মালিক।
অধ্যায় ০৩ ঃ ভালো মন্দ সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায়ই সাধিত হয়।
অধ্যায় ০৪ ঃ রেযেক শুধু আল্লাহর ইচ্ছায়ই বাড়ে কমে।
অধ্যায় ০৫ ঃ আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই।
অধ্যায় ০৬ ঃ আল্লাহ তায়ালাই শুধু গায়বের খবর জানেন।
অধ্যায় ০৭ ঃ রসূল (স.) গায়েব জানতেন না।
অধ্যায় ০৮ ঃ সন্তান দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার।
অধ্যায় ০৯ ঃ শেফা দানকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।
অধ্যায় ১০ ঃ বিপদের সাথী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।
অধ্যায় ১১ ঃ প্রার্থনা করতে হবে সরাসরি আল্লাহর কাছে।
অধ্যায় ১২ ঃ আল্লাহ তায়ালাই বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন।
অধ্যায় ০১ ঃ আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলের সৃষ্টিকর্তা
সূরা আল বাকারাহ ২৯, সূরা আল আনয়াম ১, ৭৩, ১০১, সূরা আল আম্বিয়া ৩৩, সূরা আল মোমেনুন ১২-১৪, সূরা আন নূর ৪৫, সূরা আল ফোরকান ২, সূরা লোকমান ১০, সূরা আর রহমান ১৪-১৫।
তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি এ পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের (ব্যাবহারের) জন্যে তৈরী করেছেন, অতপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং তাকে সাত আসমানে বিন্যস্ত করলেন, তিনি সবকিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত আছেন, [সূরা আল বাকারাহ ২৯]।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি আকাশমালা ও ভূমন্ডল পয়দা করেছেন। তিনি অন্ধকারসমূহ ও আলো সৃষ্টি করেছেন; অতপর যারা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করে, তারা (প্রকারান্তওে এর দারা অন্য কিছুকেই) তাদের মালিকের সমকক্ষ হিসেবে দাঁড় করায়, [সূরা আল আনয়াম ১]।
তিনিই যথাবিধি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন; যেদিন (আবার) তিনি বলবেন (সব কিছু বিলীন) হয়ে যাও, তখন (সাথে সাথেই) তা (বিলীন) হয়ে যাবে, তার কথাই হচ্ছে চুড়ান্ত সত্য, যেদিন শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে (সেদিন) যাবতীয় কর্তৃত্ব ও বাদশাহী হবে একান্তই তার; তিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত রয়েছেন; তিনি প্রজ্ঞাময়, তিনি সম্যক অবগত, [সূরা আল আনয়াম ৭৩]।
তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের (একক) উদ্ভাবক। (এদের তুমি বলো), তার সন্তান হবে কি ভাবে, তার তো জীবন সংগিনীই নেই, সব কিছু তিনিই পয়দা করেছেন এবং সব কিছু সম্পর্কে তিনি পুরোপুরিই ওয়াকেফহাল রয়েছেন, [সূরা আল আনয়াম ১০১]।
আল্লাহ তায়ালাই রাত, দিন, সুরুজ ও চাঁদকে পয়দা করেছেন; (এদের) প্রত্যেকেই (মহাকাশের) কক্ষপথে সাঁতার কেটে যাচ্ছে, [সূরা আল আম্বিয়া ৩৩]।
(হে মানুষ, তোমরা সৃষ্টি প্রক্রিয়াটা লক্ষ করো,) আমি মানুষকে মাটি (-র মূল উপাদান) থেকে পয়দা করেছি, [সূরা আল মোমেনুন ১২]।
অতপর তাকে আমি শুক্রকীট হিসেবে একটি সংরক্ষিত জায়গায় (সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে) রেখে দিয়েছি, [সূরা আল মোমেনুন ১৩]।
এরপর এ শুক্রবিন্দুকে আমি এক ফোঁটা জমাট রক্তে পরিণত করি, অতপর এ জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করি, (কিছুদিন পর) এ পিন্ডকে অস্থি পাঁজরে পরিণত করি, তারপর (এক সময়) এ অস্থি পাঁজরকে আমি গোশতের পোশাক পরিয়ে দেই, অতপর (বানানোর প্রক্রিয়া শেষ করে) আমি তাকে (সম্পুর্ণ) ভিন্ন এক সৃষ্টি (তথা পূর্ণাঙ্গ মানুষ)-রুপে পয়দা করি; আল্লাহ তায়ালা কতো উত্তম সৃষ্টিকর্তা (কতো নিপুন তার সৃষ্টি); [সূরা আল মোমেনুন ১৪]।
আল্লাহ তায়ালা বিচরণশীল প্রতিটি জীবকেই পানি থেকে পয়দা করেছেন, অতপর তাদের মধ্যে কিছু চলে তার বুকের ওপর ভর দিয়ে, কিছু চলে দু’পায়ের ওপর, (আবার) কিছু চলে চার (পা)-এর ওপর (ভর করে); আল্লাহ তায়ালা যখন যা চান তখন তাই পয়দা করেন, অবশ্যই তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান, [সূরা আন নূর ৪৫]।
(তিনিই আল্লাহ তায়ালা-) তার জন্যে রয়েছে আসমান সমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্ব, তিনি কখনো কাউকে (নিজের) সন্তান বলে গ্রহণ করেননি- না (তার এ) সার্বভৌমত্বে অন্য কারো কোনো শরীকানা আছে, তিনিই প্রতিটি বস্তু পয়দা করেছেন এবং তিনি তার (সৃষ্টির) জন্যে (আলাদা আলাদা) পরিমাপ নির্ধারণ করেছেন, [সূরা আল ফোরকান ২]।
তিনি আসমানসমূহকে কোনো স্তম্ভ ছাড়াই পয়দা করেছেন, তোমরা তো তা দেখতেই পাচ্ছো তিনি যমীনে পাহাড়সমূহ স্থাপন করে রেখেছেন যাতে করে তা তোমাদের নিয়ে কখনো (একদিকে) ঢলে না পড়ে, (আবার) তাতে প্রত্যেক প্রকারের বিচরণশীল জন্তু তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন; (হাঁ,) আমিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, অতপর (সে পানি দিয়ে) সেখানে আমি সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র উৎপাদন করিয়েছি, [সূরা লোকমান ১০]।
তিনি মানুষকে বানিয়েছেন পোড়ামতো শুকনো ঠনঠনে এক টুকরো মাটি থেকে, [সূরা আর রহমান ১৪]।
এবং জ্বিনদের বানিয়েছেন আগুন থেকে, [সূরা আর রহমান ১৫]।
অধ্যায় ০২ ঃ আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলের একমাত্র সার্বভৌম মালিক
সূরা আল ইমরান ২৬, সূরা আন নেসা ৫৩, সূরা আল মায়েদা ১৭, ৭৬, সূরা আন নাহল ৭৩, সূরা বনী ইসরাঈল ১১১, সূরা আল মোমেনুন ৮৮, সূরা সাবা ২২, সূরা আল ফাতের ১৩, সূরা আঝ ঝুমার ৪৩, সূরা আয যোখরুফ ৮৬, সূরা ফাতহ ১১, ১৪।
(হে নবী), তুমি বলো, হে রাজাধিরাজ (মহান আল্লাহ), তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে সা¤্রাজ্য দান করো, আবার যার কাছ থেকে চাও তা কেড়েও নিয়ে যাও, যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মানিত করো, যাকে ইচ্ছা তুমি অপমানিত করো; সব রকমের কল্যাণ তো তোমার হাতেই নিবদ্ধ; নিশ্চই তুমি সবকিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান, [সূরা আল ইমরান ২৬]।
অথবা (এরা কি মনে করে যে), তাদের ভাগে রাজত্ব (ও প্রাচুর্য সংক্রান্ত কিছু বরাদ্দ করা) আছে? (যদি সত্যি সত্যিই তেমন কিছু এদের দেয়া হতো) তাহলে এরা তো খেজুর পাতার একটি ঝিল্লিও কাউকে দিতে চাইতো না, [সূরা আন নেসা ৫৩]।
নিশ্চই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, মারইয়ামের পুত্র মাসীহই আল্লাহ; (হে মোহাম্মদ,) তুমি তাদের বলো, আল্লাহ তায়ালা যদি মারইয়াম পুত্র মাসীহ, তার মা ও গোটা বিশ্ব-চরাচরে যা কিছু আছে সব কিছুও ধ্বংস করে দিতে চান, এমন কে আছে যে আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে এদের রক্ষা করতে পারে? এই আকাশমালা, ভূমন্ডল ও এর মধ্যবর্তী স্থানে যা কিছু আছে, তার সার্বভৌমত্ব (এককভাবে) আল্লাহ তায়ালার জন্যেই (নির্দিষ্ট); তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন; আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয়ের ওপর একক ক্ষমতাবান, [সূরা আল মায়েদা ১৭]।
তুমি বলো, তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর এবাদাত করছো যা তোমাদের কোনো ক্ষতি কিংবা উপকার কিছুই করার ক্ষমতা রাখেনা; (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহ তায়ালা (সব কিছুই) শোনেন এবং (সব কিছুই) জানেন, [সূরা আল মায়েদা ৭৬]।
এবং এরা কি আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে তাদের (বানানো মাবুদদের) গোলামী করবে, যাদের আকাশমন্ডলী ও যমীনের (কোথাও) থেকে কোনো প্রকারের রেযেক সরবরাহ করার কোনো ক্ষমতা নেই, [সূরা আন নাহল ৭৩]। তুমি আরো বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি কখনো কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি, তার সার্বভৌমত্বে কখনোই কারো কোনো অংশীদারিত্ব ছিলো না, না তিনি কখনো দুর্দশাগ্রস্ত হন যে, তার কোনো অভিভাবকের প্রয়োজন হয় (তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে), তুমি (শুধু) তারই মাহাত্ম্য ঘোষণা করো- পরমতম মাহাত্ম্য, [সূরা বনী ইসরাঈল ১১১]।
তুমি (আবারও) জিজ্ঞেস করো, যদি তোমরা (সত্যি সত্যিই) জানো তাহলে বলো, কার হাতে রয়েছে (আসমান যমীন) সবকিছুর একক কর্তৃত্ব? (হাঁ,) তিনি (যাকে ইচ্ছা তাকেই) পানাহ দেন, কিন্তু তার ওপর কাউকে পানাহ দেয়া যায়না, [সূরা আল মোমেনুন ৮৮]।
(হে নবী,) তুমি বলো, তোমরা যাদের আল্লাহর বদলে শরীক মনে করো তাদের ডাকো, তারা (আসমানসমূহ ও যমীনের) এক অনু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয়, এ দুটো বানানোর ব্যাপারেও তাদের কোনো অংশ নেই, না তার কোনো সাহায্যকারী রয়েছে, [সূরা সাবা ২২]।
তিনিই রাতকে দিনের ভেতর এবং দিনকে রাতের ভেতর প্রবেশ করান, তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়ন্ত্রিত করেন, এরা সবাই এক সুনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করবে; আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন তোমাদের সবার মালিক, সার্বভৌমত্ব তার জন্যেই, তাকে বাদ দিয়ে তোমরা অন্য যে সব (মাবুদ)-কে ডাকো তারা তো তুচ্ছ একটি (খেজুরের) আঁটির বাইরের ঝিল্লিটির মালিকও নয়, [সূরা আল ফাতের ১৩]।
তবে কি এরা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে (অন্যদের) সুপারিশকারী (হিসেবে) গ্রহণ করেছে? (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, যদিও তোমাদের এসব সুপারিশকারী কোনো কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না, না তাদের কোনো জ্ঞান বুদ্ধি আছে, [সূরা আঝ ঝুমার ৪৩]।
তাকে বাদ দিয়ে এরা অন্য যেসব (মাবুদ)-কে ডাকে, তারা তো (আল্লাহ তায়ালার কাছে) সুপারিশের (কোনো) ক্ষমতাই রাখে না, তবে যারা সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে এবং (সত্যকে) জানবে (তাদের কথা আলাদা), [সূরা আয যোখরুফ ৮৬]।
(আরব) বেদুইনদের যারা (তোমার সাথে যোগ না দিয়ে) পেছনে পড়ে থেকেছে, তারা অচিরেই তোমার কাছে এসে বলবে (হে নবী), আমাদের মাল সম্পদ ও পরিবার পরিজন আমাদের ব্যস্ত করে রেখেছিলো, অতএব তুমি আমাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো (হে মোহাম্মদ, তুমি এদের কথায় প্রতারিত হয়ো না), এরা মুখে এমন সব কথা বলে যার কিছুই তাদের অন্তরে নেই; বরং তুমি (এদের) বলে দাও, আল্লাহ তায়ালা যদি তোমাদের কোনো ক্ষতি কিংবা কোনো উপকার করতে চান, তাহলে কে তোমাদের ব্যাপারে তার ইচ্ছা থেকে তাকে ফিরিয়ে রাখতে পারবে; তোমরা যা যা করছো আল্লাহ তায়ালা কিন্তু সে সম্পর্কে সম্যক ওয়াকেফহাল রয়েছেন, [সূরা ফাতহ ১১]।
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর (যাবতীয়) সার্বভৌমত্ব তো (এককভাবে) তারই জন্যে (নির্দিষ্ট, অতএব); তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করেন আবার যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি প্রদান করেন; আল্লাহ তায়ালা একান্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু, [সূরা ফাতহ ১৪]।
অধ্যায় ০৩ ঃ ভালো মন্দ সব কিছু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায়ই সাধিত হয়
সূরা আল মায়েদা ৪১, সূরা আল আ’রাফ ১৮৮, সূরা ইউনুস ৪৯, ১০৭, সূরা আর রা’দ ১৬, সূরা বনী ইসরাঈল ৫৬, সূরা আল ফোরকান ৩, সূরা আল ফাতহ ১১, সূরা মোমতাহেনাহ ৪, সূরা আল জ্বিন ২১।
হে রসূল, যারা দ্রæতগতিতে কুফরীর পথে ধাবিত হচ্ছে, তারা যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়, এরা সে দলের (লোক) যারা মুখে বলে, আমরা ঈমান এনেছি, কিন্তু (সত্যিকার অর্থে) তাদের অন্তর কখনো ঈমান আনেনি, আর (তাদের ব্যাপারও নয়) যারা ইহুদী- তারা মিথ্যা কথা শোনার জন্যে (সদা) কান খাড়া করে রাখে এবং (তাদের বন্ধু সম্প্রদায়ের) যেসব লোক কখনো তোমার কাছে আসেনি, এরা সেই অপর সম্প্রদায়টির জন্যেই নিজেদের কান খাড়া করে রাখে; আল্লাহর কেতাবের কথাগুলো আপন জায়গায় (বিন্যস্ত) থাকার পরেও এরা তা বিকৃত করে বেড়ায় এবং (অন্যদের কাছে) এরা বলে, (হাঁ) যদি এ (ধরনের কোনো) বিধান তোমাদের দেয়া হয় তাহলে তোমরা তা গ্রহণ করো, আর সে ধরনের কিছু না দেয়া হলে তোমরা (তা থেকে) সতর্ক থেকো; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যার পথচ্যুতি চান, তাকে আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে বাঁচানোর জন্যে তুমি তো কিছুই করতে পারো না; এরাই হচ্ছে সেসব (হতভাগ্য) লোক, আল্লাহ তায়ালা কখনো যাদের অন্তরগুলোকে পাক-সাফ করার এরাদা পোষণ করেন না, তাদের জন্যে পৃথিবীতে (যেমনি) রয়েছে অপমান (ও লাঞ্ছনা), পরকালেও (তেমনি) তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ আযাব, [সূরা আল মায়েদা ৪১]।
তুমি (আরো) বলো, আমার নিজের ভালো-মন্দের মালিকও তো আমি নই, তবে আল্লাহ তায়ালা যা চান তাই হয়; যদি আমি অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতাম, তাহলে আমি (নিজের জন্যে সে জ্ঞানের জোরে) অনেক ফায়দাই হাসিল করে নিতে পারতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না, আমি তো শুধু (একজন নবী, জাহান্নামের) সতর্ককারী ও (জান্নাতের) সুসংবাদবাহী মাত্র, শুধু সে জাতির জন্যে যারা আমার ওপর ঈমান আনে, [সূরা আল আ’রাফ ১৮৮]।
তুমি বলো (এটা বলা আমার বিষয় নয়), আল্লাহ তায়ালা যা চান তা ব্যতিরেকে আমি তো আমার নিজস্ব ভালো-মন্দের অধিকারও রাখি না (আসল কথা হচ্ছে), প্রত্যেক জাতির জন্যে (আযাব ও ধ্বংসের) একটি দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করা আছে; তাদের সে ক্ষণটি যখন আসবে তখন (তাদের ব্যাপারে) এক মুহুর্তকাল সময়ও দেরী করা হবে না এবং তাদের দিনক্ষণ আগেও নিয়ে আসা হবে না, [সূরা ইউনুস ৪৯]।
যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কোনো দুঃখ-কষ্ট দেন তাহলে তিনি ছাড়া অন্য কেউই নেই তা দূরীভূত করার, (আবার) তিনি যদি (মেহেরবানী করে) তোমার কোনো কল্যাণ চান তাহলে তার সে অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই; তিনি তার বান্দাদের যাকে চান তাকেই কল্যাণ পৌছান; আল্লাহ তায়ালা বড়োই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু, [সূরা ইউনুস ১০৭]।
(হে নবী, এদের) তুমি জিজ্ঞেস করো, আসমানসমূহ ও যমীনের মালিক কে? তুমি (তাদের) বলো, একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, (আরো) বলো, তোমরা কেনো আল্লাহকে বাদ দিয়ে অপরকে নিজেদের অভিভাবকরুপে গ্রহণ করছো, যারা নিজেদের কোনো লাভ লোকসান করতে সক্ষম নয়; তুমি (এদের) জিজ্ঞেস করো, কখনো অন্ধ ও চক্ষুস্মান ব্যক্তি কি সমান হয়, কিংবা অন্ধকার ও আলো কি কখনো সমান হয়? অথবা এরা আল্লাহর সাথে এমন কিছুকে শরীক করে নিয়েছে যে, তারা আল্লাহর সৃষ্টির মতো (কিছু) বানিয়ে দিয়েছে, যার কারণে সৃষ্টির ব্যাপারটি তাদের কাছে সন্দেহের বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে; তুমি তাদের বলো, যাবতীয় সৃষ্টির ¯্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, তিনি একক ও মহাপরাক্রমশলী! [সূরা আর রা’দ ১৬]।
(হে নবী, এদের) বলো, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের (মাবুদ) মনে করে ডাকো, তাদের ডেকে দেখো, (দেখবে,) তারা তোমাদের কাছ থেকে কষ্ট দুর করার কোনো ক্ষমতাই রাখেনা- না ক্ষমতা রাখে (তাকে) বদলে দেয়ার, [সূরা বনী ইসরাঈল ৫৬]।
(এ সত্তে¡ও) এ (মোশরেক) লোকেরা তাকে বাদ দিয়ে এমন কিছুকে মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না; বরং তাদেরই সৃষ্টি করা হয়েছে, (সত্য কথা হচ্ছে), তারা (যেমন) নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করতে সক্ষম নয়, তেমনি নিজেরা নিজেদের কোনো উপকারও করতে সক্ষম নয়। তারা কাউকে মৃত্যু দিতে পারে নাÑ কাউকে জীবনও দিতে পারে না, (তেমনি) পারে না (কেউ একবার মরে গেলে তাকে) পুনরায় উঠিয়ে আনতে, [সূরা আল ফোরকান ৩]।
(আরব) বেদুইনদের যারা (তোমার সাথে যোগ না দিয়ে) পেছনে পড়ে থেকেছে, তারা অচিরেই তোমার কাছে এসে বলবে (হে নবী), আমাদের মাল সম্পদ ও পরিবার পরিজন আমাদের ব্যস্ত করে রেখেছিলো, অতএব তুমি আমাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো (হে মোহাম্মদ, তুমি এদের কথায় প্রতারিত হয়ো না), এরা মুখে এমন সব কথা বলে যার কিছুই তাদের অন্তরে নেই; বরং তুমি (এদের) বলে দাও, আল্লাহ তায়ালা যদি তোমাদের কোনো ক্ষতি কিংবা কোনো উপকার করতে চান, তাহলে কে তোমাদের ব্যাপারে তার ইচ্ছা থেকে তাকে ফিরিয়ে রাখতে পারবে; তোমরা যা যা করছো আল্লাহ তায়ালা কিন্তু সে সম্পর্কে সম্যক ওয়াকেফহাল রয়েছেন, [সূরা ফাতহ ১১]।
তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের (ঘটনার) মাঝে রয়েছে (অনুকরণযোগ্য) আদর্শ, যখন তারা তাদের জাতিকে বলেছিলো, তোমাদের সাথে এবং তোমরা যাদের আল্লাহর বদলে উপাসনা করো তাদের সাথে আমাদের কোনোই সম্পর্ক নেই, আমরা তোমাদের এ সব দেবতাদের অস্বীকার করি। (একারণে) আমাদের ও তোমাদের মাঝে চিরদিনের জন্যে এক শত্রæতা ও বিদ্বেষ শুরু হয়ে গেলোÑ যতোদিন তোমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে মাবুদ (বলে) স্বীকার না করবে, কিন্তু (এ ব্যাপারে) ইবরাহীমের পিতার উদ্দেশ্যে বলা এ কথাটি (ব্যতিক্রম, যখন সে বলেছিলো), আমি তোমার জন্যে (আল্লাহর দরবারে) অবশ্যই ক্ষমা প্রার্থনা করবো, অবশ্য আল্লাহর কাছ থেকে (ক্ষমা আদায় করার) আমার কোনোই এখতিয়ার নেই; (ইবরাহীম ও তার অনুসারীরা বললো,) হে আমাদের মালিক, আমরা তো কেবল তোমার ওপর ভরসা করেছি এবং আমরা তোমার দিকেই ফিরে এসেছি এবং (আমাদের) তো তোমার দিকেই ফিরে যেতে হবে, [সূরা মোমতাহেনাহ ৪]।
তুমি বলো, আমি তোমাদের কোনো ক্ষতিসাধনের যেমন ক্ষমতা রাখি না, তেমনি আমি তোমাদের কোনো ভালো করার ক্ষমতাও রাখি না, [সূরা আল জ্বিন ২১]।
অধ্যায় ০৪ ঃ রেযেক শুধু আল্লাহর ইচ্ছায়ই বাড়ে কমে
সূরা আল বাকারা ২১২, সূরা আল মায়েদা ৮৮, সূরা হুদ ৬, সূরা আর রা’দ ২৬, সূরা আল হাজ্জ ৫৮, সূরা আল আনকাবুত ১৭, ৬০, সূরা আর রোম ৪০, সূরা ফাতের ৩, সূরা আল মোমেন ১৩, সূরা আশ শূরা ২৭, সূরা আয যারিয়াত ৫৮, সূরা আত ত্বালাক ৩, সূরা আল মূলক ২১ ।
যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করেছে, তাদের জন্যে তাদের এ পার্থিব জীবনটা খুব লোভনীয় করে (সাজিয়ে) রাখা হয়েছে, এরা ঈমানদার ব্যক্তিদের বিদ্রƒপ করে, (অথচ) এ ঈমানদার ব্যক্তিÑ যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করেছে, শেষ বিচারের দিন তাদের মর্যাদা (এদের তুলনায়) অনেক বেশি হবে; আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে অপরিমিত রেযেক দান করেন, [সূরা আল বাকারা ২১২]।
আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যে হালাল ও পবিত্র রেযেক দান করেছেন তোমরা তা খাও এবং (এ ব্যাপারে) সে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, যার ওপর তোমরা ঈমান এনেছো, [সূরা আল মায়েদা ৮৮]।
যমীনের ওপর বিচরণশীল এমন কোনো জীব নেই, যার রেযেক (পৌছানোর দায়িত্ব) আল্লাহর ওপর নেই, তিনি (যেমন) তার আবাস সম্পর্কে অবহিত, (তেমনি তার মৃত্যুর পর) তাকে যেখানে সোর্পদ করা হবে তাও তিনি জানেন; এসব (কথা) একটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে (লিপিবদ্ধ) আছে, [সূরা হুদ ৬]।
আল্লাহ তায়ালা যার জীবনোপকরণে প্রশস্ততা দিতে চান তাই করেন, আবার যাকে তিনি চান তার রেযেক সংকীর্ণ করে দেন; আর এরা এ বৈষয়িক জীবনের ধন সম্পদের ব্যাপারেই বেশী উল্লাসিত হয়, অথচ আখেরাতের তুলনায় এ পার্থিব জীবন (কিছু ক্ষণস্থায়ী) জিনিস ছাড়া আর কিছুই হবে না, [সূরা আর রা’দ ২৬]।
যারা আল্লাহ তায়ালার পথে (তারই সন্তুষ্টির জন্যে) নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে গেছে, পরে (আল্লাহর পথে) নিহত হয়েছে, কিংবা (এমনিই) মৃর্ত্যু বরণ করেছে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (কেয়ামতের দিন) তাদের উত্তম রেযেক দান করবেন; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সর্বোত্তম রেযেক দাতা, [সূরা আল হাজ্জ ৫৮]।
তোমরা তো আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে কেবল মূর্তিসমূহের পূজা করো এবং (স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে) মিথ্যা কথা উদ্ভাবন করো; আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে যেসব মূর্তির তোমরা পূজা করো, তারা তোমাদের কোনোরকম রেযেকের মালিক নয়, অতএব তোমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রেযেক চাও, শুধু তারই এবাদাত করো এবং তার (নেয়ামতের) শোকর আদায় করো; (কেননা) তোমাদের তার কাছেই ফিরিয়ে নেয়া হবে, [সূরা আল আনকাবুত ১৭]।
কতো (ধরনের) বিচরণশীল জীব (এ দুনিয়ায়) রয়েছে, যারা কেউই নিজেদের রেযেক (নিজেরা কাঁধে) বহন করে বেড়ায় না, আল্লাহ তায়ালা তাদের এবং তোমাদের (নিত্যদিনের) রেযেক সরবরাহ করেন, তিনি সবকিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন, [সূরা আল আনকাবুত ৬০]।
আল্লাহ তায়ালা (সেই পরাক্রমশালী)Ñ যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অতপর তিনি তোমাদের রেযেক দান করেছেন, তিনিই আবার তোমাদের মৃর্ত্যু দেবেন, অতপর (কেয়ামতের দিন) তিনি তোমাদের (আবার) জীবন দেবেন; তোমরা যাদের (আল্লাহর সাথে) শরীক করে নিয়েছো তাদের কেউ কি এমন আছে, যে এর কোনো একটি কাজও করতে পারবে? (মূলত) তারা (আল্লাহর সাথে) যাদের শরীক বানায়, আল্লাহ তায়ালা তা থেকে অনেক পবিত্র, অনেক মহান, [সূরা আর রোম ৪০]।
হে মানুষ, তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতসমূহের কথা স্বরণ করো; আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কি তোমাদের আর কোনো ¯্রষ্টা আছে যে তোমাদের আসমান ও যমীন থেকে রেযেক সরবরাহ করে; তিনি ছাড়া (তোমাদের) আর কোনোই মাবুদ নেই, তারপরও তোমরা কোথায় কোথায় ঠোকর খাচ্ছো? [সূরা ফাতের ৩]।
(হে মানুষ,) তিনিই আল্লাহ তায়ালা, যিনি তোমাদের তার (কুদরতের) নিদর্শনসমূহ দেখান এবং আসমান থেকে তোমাদের জন্যে রেযেক পাঠান, (আসলে এ থেকে) তারাই শিক্ষা গ্রহণ করে যারা (একান্তভাবে) আল্লাহ তায়ালার দিকে নিবিষ্ট হয়, [সূরা আল মোমেন ১৩]।
যদি আল্লাহ তায়ালা তার (সব) বান্দাদের রেযেকে প্রাচুর্য দিতেন তাহলে তারা নিসন্দেহে যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতো, (তাই) তিনি পরিমাণমতো যাকে (যতটুকু) চান তার জন্যে (ততোটুকু রেযেকই) নাযিল করেন; অবশ্য তিনি নিজের বান্দাদের (প্রয়োজন) সম্পর্কে পূর্ণাংগ ওয়াকেফহাল রয়েছেন, তিনি (তাদের প্রয়োজনের দিকেও) নযর রাখেন, [সূরা আশ শূরা ২৭]।
নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালাই জীবিকা সরবরাহকারী, তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রবল ক্ষমতার অধিকারী, [সূরা আয যারিয়াত ৫৮]।
এবং তিনি তাকে এমন রেযেক দান করেন যার (উৎস) সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই; যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্যে আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট; (কেননা) আল্লাহ তায়ালা তার নিজের কাজটি পূর্ণ করেই নেন; আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি জিনিসের জন্যেই একটি পরিমাণ ঠিক করে রেখেছেন, [সূরা আত ত্বালাক ৩]।
যদি তিনি তোমাদের জীবিকা (-ও উপকরণ) সরবরাহ বন্ধ করে দেন, তাহলে (এখানে) এমন (দ্বিতীয়) আর কে আছে যে তোমাদের (পুনরায়) রেযেক সরবরাহ করতে পারবে? এরা তো বরং (মনে হয় আল্লাহ তায়ালার) বিদ্রোহ এবং গোঁড়ামিতেই (অবিচল হয়ে) রয়েছেন, [সূরা আল মূলক ২১]।
অধ্যায় ০৫ ঃ আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই
সূরা আল বাকারা ১৬৩, ২৫৫, সূরা আল ইমরান ৬২, সূরা আন নেসা ১৭১, সূরা আল মায়েদা ৭৩, সূরা আল আনয়াম ৪৬, সূরা আল আ’রাফ ৬৫, সূরা ইবরাহীম ৫২, সূরা আন নাহল ২২, ৫১, সূরা বনী ইসরাঈল ২২, সূরা কাহফ ১১০, সূরা আল আম্বিয়া ১০৮, সূরা আল হাজ্জ ৩৪, সূরা আল মোমেনূন ৯১, সূরা আন নামল ৬০, সূরা আল কাছাছ ৭১, সূরা ছোয়াদ ৬৫, সূরা হা-মীম আস সাজদাহ ৬, সূরা আয যোখরুফ ৮৪, সূরা আত তূর ৪৩ ।
তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন, তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই, তিনি দয়ালু, তিনি মেহেরবান, [সূরা আল বাকারা ১৬৩]।
মহান আল্লাহ তায়ালা, তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, তিনি অনাদি এক সত্তা, ঘুম (তো দূরের কথা, সামান্য) তন্ত্রাও তাকে আচ্ছন্ন করে না; আসমান সমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তার সব কিছুরই একচ্ছত্র মালিকানা তার; কে এমন আছে যে তার দরবারে বিনা অনুমতিতে কিছু সুপারিশ পেশ করবে? তাদের বর্তমান ভবিষ্যতের সব কিছুই তিনি জানেন, তার জানা বিষয় সমূহের কোনো কিছুই (তার সৃষ্টির) কারো জ্ঞানের সীমা পরিসীমার আয়ত্তাধীন হতে পারে না, তবে কিছু জ্ঞান যদি তিনি কাউকে দান করেন (তবে তা ভিন্ন কথা), তার বিশাল স¤্রাজ্য আসমান যমীনের সব কিছুই পরিবেষ্টন করে আছে, এ উভয়টির হেফাযত করার কাজ কখনো তাকে পরিশ্রান্ত করে না, তিনি পরাক্রমশালী ও অসীম মর্যাদাবান, [সূরা আল বাকারা ২৫৫]।
এ হচ্ছে সঠিক (ও নির্ভুল) ঘটনা। আল্লাহ তায়ালা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মা’বুদ নেই; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা পরম শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়, [সূরা আল ইমরান ৬২]।
হে কেতাবধারীরা, নিজেদের দ্বিনের ব্যাপারে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না এবং (ঈসার ঘটনা নিয়ে) আল্লাহ তায়ালার ওপর সত্য ছাড়া কোনো মিথ্যা চাপিয়ো না; (সে সত্য কথাটি হচ্ছে এই যে,) মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ছিলো (একজন) রসূল ও তার এমন এক বাণী, যা তিনি মারইয়ামের ওপর প্রেরণ করেছেন এবং সে ছিলো আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে পাঠানো এক ‘রূহ’, অতএব (হে আহলে বেতাবরা), তোমরা আল্লাহ তায়ালা ও তার রসূলদের ওপর ঈমান আনো, আর (কখনো) এটা বলো না যে, (মা’বুদের সংখ্যা) তিন; এ (জঘন্য মিথ্যা) থেকে তোমরা বেঁচে থেকো, (এটাই) তোমাদের জন্যে উত্তম; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা, তিনি তো একক মা’বুদ; আল্লাহ তায়ালা এ (মূর্খতা) থেকে অনেক পবিত্র যে, তার কোনো সন্তান থাকবে; এ আকাশ ও ভূমন্ডলের সব কিছুর মালিকানাই তো তার, আর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট, [সূরা আন নেসা ১৭১]।
তারাও কুপরী করেছে যারা বলেছে, তিন জনের মধ্যে তৃতীয় জন হচ্ছেন আল্লাহ। অথচ এক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই; তারা যদি এখনো তাদের এসব (অলীক) কথাবার্তা থেকে ফিরে না আসে, তবে তাদের মাঝে যারা (একথা বলে) কুফরী করেছে, তাদের অবশ্যই কঠিন যন্ত্রণাদায়ক আযাবে পেয়ে যাবে, [সূরা আল মায়েদা ৭৩]।
(হে রসূল, তাদের) তুমি বলো, তোমরা কি একথা ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহ তায়ালা কখনো তোমাদের শোনার ও দেখার ক্ষমতা কেড়ে নেন এবং তোমাদের অন্তর সমূহের ওপর মোহর মেরে দেন, তবে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তোমাদের দ্বিতীয় কোনো ইলাহ আছে কি, যে তোমাদের এসব কিছু ফিরিয়ে দিতে পারবে; লক্ষ করো, কিভাবে আমার আয়াত সমূহ আমি খুলে খুলে বর্ণনা করছি, এ সত্তে¡ও অতপর তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, [সূরা আল আনয়াম ৪৬]।
আমি আ’দ জাতির কাছে (পাঠিয়েছিলাম) তাদেরই এক ভাই হূদকে, সে (তাদের) বললো, হে আমার জাতি, তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করো, তিনি ছাড়া তোমাদের দ্বিতীয় কোনো ইলাহ নেই; তোমরা কি (তাকে) ভয় করবে না? [সূরা আল আ’রাফ ৬৫]।
এ (কোরআন) হচ্ছে মানুষের জন্যে এক (মহা) পয়গাম, যাতে করে এ (গ্রন্থ) দিয়ে (পরকালীন আযাবের ব্যাপারে) তাদের সতর্ক করে দেয়া যায়, তারা যেন (এর মাধ্যমে) এও জানতে পারে, তিনিই একমাত্র মা’বুদ, (সর্বোপরি) বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা যাতে করে (এর দ¦ারা) উপদেশ গ্রহণ করতে পারে, [সূরা ইবরাহীম ৫২]।
(হে মানুষ,) তোমাদের মাবুদ তো একজন (তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই), অতপর যারা পরকালের ওপর ঈমান আনে না তাদের অন্তরসমূহ (এমনিই সত্য) অস্বীকারকারী হয়ে পড়ে এবং এরা নিজেরাও হয় (দারুণ) অহংকারী, [সূরা আন নাহল ২২]।
(হে মানুষ,) আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা (অনুগত্যের জন্যে) দু’জন মাবুদ গ্রহণ করো না, মা’বুদ তো শুধু একজন, সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো, [সূরা আন নাহল ৫১]।
(হে মানুষ,) আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে মা’বুদ বানিয়ো না, নতুবা (পরকালে) তোমরা নিন্দিত অপমানিত ও নিসহায় হয়ে পড়বে, [সূরা বনী ইসরাঈল ২২]।
(হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন (রক্ত মাংসের) মানুষ, তবে আমার ওপর ওহী নাযিল হয় (আর সে ওহীর মূল কথা হচ্ছে), তোমাদের মা’বুদ হচ্ছেন একজন, অতএব তোমাদের মাঝে যদি কেউ তার মালিকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন (হামেশা) নেক আমল করে, সে যেন কখনো তার মালিকের এবাদাতে অন্য কাউকে শরীক না করে, [সূরা কাহফ ১১০]।
তুমি (এদের) বলো, আমার ওপর এই মর্মে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তোমাদের মা’বুদ একজনই, তোমরা কি (তার) অনুগত বান্দা হবে না? [সূরা আল আম্বিয়া ১০৮]।
প্রত্যেক জাতির জন্যে আমি (পশু) কোরবানির এ নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে করে (সেই জাতির) লোকেরা সেসব পশুর ওপর আল্লাহ তায়ালার নাম নিতে পারে, যা তিনি তাদের দান করেছেন; সুতরাং তোমাদের মাবুদ তো হচ্ছেন একজন, অতএব তোমরা তারই সামনে অনুগত্যের মাথা নত করো; (হে নবী,) তুমি (আমার) বিনীত বান্দাদের (সাফল্যের) সুসংবাদ দাও, [সূরা আল হাজ্জ ৩৪]।
আল্লাহ তায়ালা (কাউকেই) সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেননিÑ না তার সাথে অন্য কোনো মাবুদ রয়েছে, যদি (তার সাথে অন্য কোনো মাবুদ) থাকতো তাহলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেতো এবং (এ মাবুদরা) একে অন্যের ওপর প্রাধান্য কিস্তার করতে চাইতো, এরা যা কিছু আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে বলে তিনি তা থেকে অনেক পবিত্র ও মহান, [সূরা আল মোমেনূন ৯১]।
অথবা তিনি (শ্রেষ্ঠ)Ñ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন পয়দা করেছেন এবং আসমান থেকে তোমাদের জন্যে পানি বর্ষণ করেছেন, (আবার) তা দিয়ে (যমীনে) মনোরম উদ্যান তৈরী করেছেন, অথচ তার (একটি ক্ষদ্র) বৃক্ষ পয়দা করারও তোমাদের ক্ষমতা নেই; (বলো, এসব কাজে) আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কেউ মাবুদ আছে কি? বরং তারা হচ্ছে এমন এক সম্প্রদায়, যারা অন্যকে আল্লাহ তায়ালার সমকক্ষ সাব্যস্ত করছে! [সূরা আন নামল ৬০]।
(হে নবী,) এদের জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহ তায়ালা রাতকে তোমাদের ওপর কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া এমন কোন মাবুদ আছে যে তোমাদের একটুখানি আলো এনে দিতে পারবে; (তারপরও) তোমরা কর্ণপাত করবে না? [সূরা আল কাছাছ ৭১]।
(হে নবী, এদের) বলো, আমি তো (জাহান্নামের) একজন সতর্ককারী মাত্র, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি একক, তিনি মহাপরাক্রমশালী, [সূরা ছোয়াদ ৬৫]।
(হে নবী,) তুমি বলো, আমি তো তোমাদেরই মতো একজন মানুষ, কিন্তু আমার ওপর (এ মর্মে) ওহী নাযিল হয় যে, তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন, অতএব (হে মানুষ), তোমরা তার এবাদাতের দিকেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাও এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; আর দুর্ভোগতো মোশরেকদের জন্যে নির্ধারিত হয়েই আছে, [সূরা হা-মীম আস সাজদাহ ৬]।
তিনি হচ্ছেন আসমানে মাবুদ, যমীনেও মাবুদ; তিনি বিজ্ঞ, কুশলী, সর্বজ্ঞ, [সূরা আয যোখরুফ ৮৪]।
আল্লাহ তায়ালার বদলে এদের কি অন্য কোনো মাবুদ আছে? আল্লাহ তায়ালা তো এদের (যাবতীয়) শেরেকী কর্মকান্ড থেকে পবিত্র, [সূরা আত তূর ৪৩]।
অধ্যায় ০৬ ঃ আল্লাহ তায়ালাই শুধু গায়বের খবর জানেন
সূরা আল বাকারা ৩৩, সূরা আল মায়েদা ১০৯, ১১৬, সূরা আল আনয়াম ৫৯, ৭৩, সূরা আত তাওবা ৭৮, ৯৪, ১০৫, সূরা ইউনুস ২০, সূরা হুদ ১২৩, সূরা আল কাহফ ২৬, সূরা আল ফাতের ৩৮, সূরা সাবা ৩, সূরা আল হুজরাত ১৮।
আল্লাহ তায়ালা (এবার) আদমকে বললেন, তুমি তাদের কাছে তাদের নামগুলো বলে দাও, অতএব আদম (আল্লাহর দির্দেশে) তাদের (সামনে) তাদের নামগুলো যখন (সুন্দরভাবে) বলে দিলো, তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আমি আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় না দেখা বস্তু জানি এবং তোমরা যা কিছু প্রকাশ করো আর যা কিছু গোপন করো আমি তাও ভালোভাবে জানি, [সূরা আল বাকারা ৩৩]।
যেদিন আল্লাহ তায়ালা সকল রসূলকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের (দাওয়াতের প্রতি মানুষদের পক্ষ থেকে) কিভাবে সাড়া দেয়া হয়েছিলো; তারা বলবে, আমরা তো (তার) কিছুই জানি না; যাবতীয় গায়বের বিষয়ে তুমিই পরিজ্ঞাত, [সূরা আল মায়েদা ১০৯]।
যখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে মারইয়াম পুত্র ঈসা! তুমি কি কখনো (তোমার) লোকদের (একথা) বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মা কে ‘ইলাহ’ বানিয়ে নাও! (এ কথার উত্তরে) সে বলবে (হে আল্লাহ), সমগ্র পবিত্রতা তোমার জন্যে, এমন কোনো কথা আমার পক্ষে শোভা পেতো না, যে কথা বলার আমার কোনো অধিকারই ছিলো না, যদি আমি তাদের এমন কোনো কথা বলতামই, তাহলে তুমি তো অবশ্যই তা জানতে; নিশ্চই তুমি তো জানো আমার মনে যা কিছু আছে, কিন্তু আমি তো জানিনা তোমার মনে কি আছে; যাবতীয় গায়ব অবশ্যই তুমি ভালো করে অবগত আছো, [সূরা আল মায়েদা ১১৬]।
গায়বের চাবিগুলো সব তার হাতেই নিবদ্ধ রয়েছে, সে-ই (অদৃশ্য) খবর তো তিনি ছাড়া আর কারোই জানা নেই; জলে-স্থলে (যেখানে) যা কিছু আছে তা শুধু তিনিই জানেন; (এই সৃষ্টিরাজির মধ্যে) একটি পাতা কোথাও ঝরে না যার (খবর) তিনি ছাড়া অন্য কেউই জানে না, মাটির অন্ধকারে একটি শস্যকণাও নেইÑ নেই কোনো তাজা সবুজ, (কিংবা ক্ষয়িষ্ণু) শুকনো (কিছু), যার (পূর্ণাংগ) বিবরণ একটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে মজুদ নেই, [সূরা আল আনয়াম ৫৯]।
তিনি যথাবিধি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন; যেদিন (আবার) তিনি বলবেন (সব কিছু বিলিন) হয়ে যাও, তখন (সাথে সাথেই) তা (বিলিন) হয়ে যাবে, তার কথাই হচ্ছে চুড়ান্ত সত্য, যেদিন শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে (সেদিন) যাবতীয় কর্তৃত্ব ও বাদশাহী হবে একান্তই তার; তিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত রয়েছেন; তিনি প্রজ্ঞাময়, তিনি সম্যক অবগত, [সূরা আল আনয়াম ৭৩]।
এ লোকেরা কি একথা জানতো না, তাদের সব গোপন কথা ও সব সলাপরামর্শ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা জানেন এবং অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা গায়ব সম্পর্কেও বিশেষভাবে অবহিত, [সূরা আত তাওবা ৭৮]।
(যুদ্ধ শেষে) তোমরা যখন তাদের কাছে ফিরে আসবে; তখন এরা তোমাদের কাছে ওযর পেশ করবে, তুমি (তাদের) বলো, (আজ) তোমরা কোনো রকম ওযর-আপত্তি পেশ করো না, আমরা আর কখনো তোমাদের বিশ্বাস করবো না, আল্লাহ তায়ালা (ইতিমধ্যেই) তোমাদের (অন্তরের) সব কথা আমাদের বলে দিয়েছে; আল্লাহ তায়ালা ও তার রসূল অবশ্যই তোমাদের কার্যকলাপ দেখবেন, অতপর তোমাদের সেই মহান সত্তার কাছেই ফিরে যেতে হবে, যিনি (যেমন) জানেন তোমাদের গোপন করে রাখা সব কিছু, (তেমনি) জানেন প্রকাশ্য বিষয়সমূহ, অতপর তিনি (সে আলোকে) তোমাদের বলে দেবেন (দুনিয়ার জীবনে) তোমরা কি কাজ করছিলে, [সূরা আত তাওবা ৯৪]।
(হে নবী, এদের) তুমি বলো, তোমরা (ভালো) কাজ করো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তার রসূল ও মোমেনরা তোমাদের (ভবিষ্যত) কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করবেন; অতপর মৃর্ত্যুর পর তোমাদের সবাইকে এমন এক সত্তার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, যিনি দেখা-অদেখা সব কিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত, অতপর তিনি তোমাদের বলে দেবেন তোমরা (দুনিয়ার জীবনে) কোন ধরনের কাজ করছিলে, [সূরা আত তাওবা ১০৫]।
তারা (আরো) বলে, তার মালিকের কাছ থেকে তার ওপর কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন? তুমি (তাদের) বলো, গায়ব সংক্রান্ত যাবতীয় জ্ঞান তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যে, অতএব (আল্লাহ তায়ালা সে গায়বী ফয়সালার জন্যে) তোমরা অপেক্ষা করো (আর) আমিও তোমাদের সাথে (সেদিনের) প্রতীক্ষা করছি, [সূরা ইউনুস ২০]।
আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় গায়ব বিষয় আল্লাহ তায়ালার জন্যেই (নিবেদিত) এবং এর সব কয়টি বিষয় তার দিকেই ধাবিত হবে, অতএব (হে নবী), তুমি তারই এবাদাত করো এবং (বিপদে-আপদে) একান্তভাবে তার ওপরই ভরসা করো; (হে মানুষ,) তোমরা যা কিছু করছো সে সম্পর্কে তোমার মালিক কিন্তু মোটেই বে-খবর নন, [সূরা হুদ ১২৩]।
(হে নবী,) তুমি বলো, (বস্তুত) একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সঠিক করে বলতে পারেন, ওরা (গুহায়) কতো বছর কাটিয়েছে, আসমানসমূহ ও যমীনের (যাবতীয়) গায়ব বিষয়ে জ্ঞান তো একমাত্র তার (জন্যই নির্দিষ্ট রয়েছে); কতো সুন্দর দ্রষ্টা তিনি, কতো সুন্দর শ্রোতা তিনি! তিনি ছাড়া তাদের দ্বিতীয় কোনোই অভিভাবক নেই, আল্লাহ তায়ালা নিজের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতায় অন্য কাউকে কখনো শরীক করেন না, [সূরা আল কাহফ ২৬]।
নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা আসমানসমূহ ও যমীনের (যাবতীয় দেখা) অদেখা বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন, (এমনকি মানুষের) মনের ভেতরে যা কিছু লুকিয়ে আছে সে সম্পর্কেও তিনি ভালো করে জানেন, [সূরা আল ফাতের ৩৮]।
যারা (আল্লাহ তায়ালার এসব কুদরত) অস্বীকার করে তারা বলে, আমাদের ওপর কখনোই কেয়ামত আসবে না; (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, আমার মালিকের কসম, হ্যাঁ, অবশ্যই তা তোমাদের ওপর আপতিত হবে, (আমার মালিক) অদৃশ্য (জগত) সম্পর্কে অবহিত, এ আকাশমন্ডলী ও যমীনের অণু পরমাণুÑ তার চাইতেও ক্ষুদ্র কিংবা বড়োÑ এর কোনো কিছুই তার (জ্ঞানসীমার) অগোচরে নয়, এমন কিছু নেই যা সুস্পষ্ট গ্রন্থে (লিপিবদ্ধ) নেই! [সূরা সাবা ৩]।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর যাবতীয় অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন, এ যমীনে তোমরা যা করে বেড়াও তার সব কিছুই আল্লাহ তায়ালা পর্যবেক্ষণ করেন, [সূরা আল হুজরাত ১৮]।
অধ্যায় ০৭ ঃ রসুল (স.) গায়েব জানতেন না
সূরা আল আনয়াম ৫০, সূরা আ’রাফ ১৮৭, ১৮৮, সূরা আল জ্বিন ২৫।
(হে মোহাম্মাদ,) তুমি বলো, আমি তো তোমাদের (একথা) বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ তায়ালার বিপুল ধনভান্ডার রয়েছে, না (একথা বলি যে,) আমি গায়বের কোনো খবর রাখি! আর একথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা, (আসলে) আমি তো সেই ওহীরই অনুসরণ করি যা আমার ওপর নাযিল করা হয়, তুমি বলো, অন্ধ আর চক্ষুস্মান ব্যক্তি কি (কখনো) এক হতে পারে? তোমরা কি মোটেই চিন্তাভাবনা করো না? [সূরা আল আনয়াম ৫০]।
তারা তোমার কাছে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, এ জ্ঞান তো (রয়েছে) আমার মালিকের কাছে, এর সময় আসার আগে তিনি তা প্রকাশ করবেন না, (তবে) আকাশমন্ডল ও যমীনের জন্যে সেদিন তা হবে একটি ভয়াবহ ঘটনা; এটি তোমাদের কাছে একান্ত আকস্মিকভাবেই; তারা (এ প্রশ্নটি এমনভাবে) জিজ্ঞেস করে যে, মনে হয় তুমি বুঝি বিষয়টি সম্পর্কে সব কিছু জানো; (তাদের) বলো, কেয়ামতের জ্ঞান তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই (এ সত্যটুকু) জানে না, [সূরা আ’রাফ ১৮৭]।
তুমি (আরো) বলো, আমার নিজের ভালো-মন্দেও মালিকও তো আমি নই, তবে আল্লাহ তায়ালা যা চান তাই হয়; যদি আমি অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতাম, তাহলে আমি (নিজের জন্যে সে জ্ঞনের জোরে) অনেক ফায়দাই হাসিল করে নিতে পারতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না, আমি তো শুধু (একজন নবী, জাহান্নামের) সতর্ককারী ও (জান্নাতের) সুসংবাদবাহী মাত্র, শুধু সে জাতির জন্যে যারা আমার ওপর ঈমান আনে, [সূরা আ’রাফ ১৮৮]।
তুমি (এদের) বলো, আমি (নিজেই) জানি না, তোমাদের (কেয়ামত দিবসের) যে প্রতিশ্রæতি দেয়া হচ্ছে তা কি (আসলেই) সন্নিকটে, না আমার প্রতিপালক তার (আগমনের) জন্যে কোনো (দীর্ঘ) মেয়াদ ঠিক করে রেখেছে, [সূরা আল জ্বিন ২৫]।
অধ্যায় ০৮ ঃ সন্তান দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার
সূরা আশ শূরা ৪৯-৫০।
আকাশমন্ডলী ও যমীনের (সমুদয়) সার্বভৌমত্ব (একমাত্র) আল্লাহ তায়ালার জন্যে; তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন; যাকে চান তাকে কন্যা সন্তান দান করেন, আবার যাকে চান তাকে পুত্র সন্তান দান করেন, [সূরা আশ শূরা ৪৯]।
যাকে চান তাকে পুত্র কন্যা (উভয়টাই) দান করেন, (আবার) যাকে চান তাকে তিনি বন্ধা করে দেন; নিসন্দেহে তিনি বেশী জানেন, ক্ষমতাও তিনি বেশী রাখেন, [সূরা আশ শূরা ৫০]।
অধ্যায় ০৯ ঃ শেফা দানকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা
সূরা আশ শোয়ারা ৮০।
আর আমি যখন রোগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন, [সূরা আশ শোয়ারা ৮০]।
অধ্যায় ১০ ঃ বিপদের সাথী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা
সূরা ইউনুস ১২, সূরা আল আম্বিয়া ৮৪, সূরা বনী ইসরাঈল ৫৬, সূরা আঝ ঝুমার ৩৮।
মানুষকে যখন কোনো দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন সে বসে, শুয়ে, দাড়িয়ে সর্বাবস্থায় আমাকেই ডাকে, অতপর আমি যখন তার দুঃখ-কষ্ট তার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাই, তখন সে এমনি (বেপরোয়া হয়ে) চলতে শুরু করে, তাকে যে এক সময় দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছিলো, (মনে হয়) তা দূর করার জন্যে আমাকে সে কখনো ডাকেইনি; এভাবেই যারা (বার বার) সীমালংঘন করে তাদের জন্যে তাদের কাজকর্ম শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে, [সূরা ইউনুস ১২]।
অতপর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার যে কষ্ট ছিলো তা আমি দূর করে দিলাম, তাকে (যে শুধু) তার পরিবার পরিজনই ফিরিয়ে দিলাম (তা নয়); বরং তাদের (সবাইকে) আমার কাছ থেকে বিশেষ দয়া এবং আমার বান্দাদের জন্যে উপদেশ হিসেবে আরো সমপরিমাণ (অনুগ্রহ) দান করলাম, [সূরা আল আম্বিয়া ৮৪]।
(হে নবী, এদের) বলো, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের (মাবুদ) মনে করে ডাকো, তাদের ডেকে দেখো, (দেখবে,) তারা তোমার কাছ থেকে কষ্ট দূর করার কোনো ক্ষমতাই রাখেনাÑ না ক্ষমতা রাখে (তাকে) বদলে দেয়ার, [সূরা বনী ইসরাঈল ৫৬]।
(হে নবী,) যদি তুমি এদের কাছে জিজ্ঞেস করো, আকাশমালা ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে, সাথে সাথেই ওরা বলবে, আল্লাহ তায়ালাই (এসব সৃষ্টি করেছেন); এবার তাদের তুমি বলো, তোমরা কখনো ভেবে দেখেছো কি, যদি আল্লাহ তায়ালা আমাকে কোনো কষ্ট পৌছাতে চান তাহলে তিনি ছাড়া যাদের তোমরা ডাকো তারা কি সে কষ্ট দূর করতে পারবে? কিংবা তিনি যদি আমার ওপর (তার) অনুগ্রহ করতে চান, (তাহলে) এরা তার সে অনুগ্রহ কি রোধ করতে পারবে? (হে নবী,) তুমি বলো, আমার জন্যে আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট; যারা নির্ভর করতে চায় তাদের তো তার ওপরই নির্ভর করা উচিৎ, [সূরা আঝ ঝুমার ৩৮]।
অধ্যায় ১১ ঃ প্রার্থনা করতে হবে সরাসরি আল্লাহর কাছে
সূরা আল আনয়াম ৪০, ৪১, সূরা আল আ’রাফ ২৯, সূরা ইউনুস ১০৬, সূরা আর রা’দ ১৪, সূরা আল ফোরকান ৬৮, সূরা আল মোমেন ১৪।
তুমি বলো, তোমরা কি ভেব দেখেছো, যখন তোমাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে (বড় ধরনের) কোনো আযাব আসবে, কিংবা হঠাৎ করে কেয়ামত এসে হাজির হবে, তখন তোমরা কি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কাউকে ডাকবে? (বলো) যদি তোমরা সত্যবাদী হও! [সূরা আল আনয়াম ৪০]।
বরং তোমরা (তো সেদিন) শুধু তাকেই ডাকবে, তোমরা যে জন্যে তাকে ডাকবে তিনি চাইলে তা দূর করে দেবেন (এবং) যাদের তোমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে অংশীদার বানাতে, তাদের সবাইবে (তখন) তোমরা ভুলে যাবে, [সূরা আল আনয়াম ৪১]।
তুমি (আরো) বলো, আমার মালিক তো শুধু ন্যায়-ইনসাফেরই আদেশ দেন, (তার আদেশ হচ্ছে,) প্রতিটি এবাদাতেই তোমরা তোমাদের লক্ষ স্থীর রাখবে; তাকেই তোমরা ডাকো, নিজেদের জীবন বিধানকে একান্তভাবে তার জন্যে খালেস করে; যেভাবে তিনি তোমাদের (সৃষ্টির) শুরু করেছেন সেভাবেই তোমরা (আবার তার কাছে) ফিরে যাবে, [সূরা আল আ’রাফ ২৯]।
(আমাকে আদেশ করা হয়েছে,) তুমি কখনো আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডেকো না, যে তোমার কোনো কল্যাণ (যেমন) করতে পারে না, (তেমনি) তোমার কোনো অকল্যাণও সে করতে পারে না, (এ সত্তে¡ও) যদি তুমি অন্যথা করো, তাহলে অবশ্যই তুমি যালেমদের মধ্যে গণ্য হবে, [সূরা ইউনুস ১০৬]।
(তাই) তাকে ডাকাই হচ্ছে সঠিক (পন্থা); যারা তাকে বাদ দিয়ে অন্যদের ডাকে, তারা (জানে, তাদের ডাকে এরা) কখনোই সাড়া দেবে না, (এদের উদাহরণ হচ্ছে) যেমন একজন মানুষ, (যে পিপাসায় কাতর হয়ে) নিজের উভয় হাত পানির দিকে প্রসারিত করে এ আশায় যে, পানি (তার মুখে) এসে পৌছুবে, অথচ তা (কোনো অবস্থায়ই) তার কাছে পৌছাবার নয়, কাফেরদের দোয়া (এমনিভাবে) নিস্ফল (ঘুরতে থাকে), [সূরা আর রা’দ ১৪]।
যারা আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কোনো মাবুদকে ডাকে না, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে যাকে হত্যা করতে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন তাকে যারা হত্যা করে না, (উপরন্তু) যারা ব্যভিচার করে না, যে ব্যক্তিই এসব (অপরাধ) করবে সে (তার গুনাহের) শাস্তি ভোগ করবে, [সূরা আল ফোরকান ৬৮]।
অতএব (হে মুসলমান), তোমরা (তোমাদের) জীবন বিধানকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার জন্যেই নিবেদিত করো, একমাত্র তাকেই ডাকো, যদিও কাফেররা (এটা) পছন্দ করে না, [সূরা আল মোমেন ১৪]।
অধ্যায় ১২ ঃ আল্লাহ তায়ালাই বিপদগ্রস্ত ব্যাক্তির দোয়া কবুল করেন
সূরা আল বাকারা ১৮৬, সূরা আন নামল ৬২, সূরা আঝ ঝুমার ৪৯।
(হে নবী,) আমার কোনো বান্দা যখন তোমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে (তাকে তুমি বলে দিয়ো), আমি (তার একান্ত) কাছেই আছি; আমি আহব্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে, তাই তাদেরও উচিৎ আমার আহŸানে সাড়া দেয়া এবং (সম্পর্ণভাবে) আমার ওপরেই ঈমান আনা, আশা করা যায় এতে করে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে, [সূরা আল বাকারা ১৮৬]।
অথবা তিনিই (শ্রেষ্ঠ)Ñ যিনি কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন, যখন (নিরুপায় হয়ে) সে তাকেই ডাকতে থাকে, তখন (তার) বিপদ আপদ তিনি দূরীভূত করে দেন এবং তিনি তোমাদের এ যমীনে তার প্রতিনিধি বানান; (এসব কাজে) আল্লাহ তায়ালার সাথে আর কোনো মাবুদ কি আছে? (আসলে) তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো; [সূরা আন নামল ৬২]।
মানুষদের (অবস্থা হচ্ছে,) যখন কোনো দুঃখ কষ্ট তাদের স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকে, অতপর আমি যখন তাকে আমার কাছ থেকে কোনো রকম নেয়ামত দান করি তখন সে বলে, এটা তো আমার জ্ঞানের (যোগ্যতার) ওপরই দেয়া হয়েছে, না (আসলে তা নয়); বরং এটা হচ্ছে পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না, [সূরা আঝ ঝুমার ৪৯]।
আমার কাজে লাগবে এমন কিছু কুরআনে আছে কি ? কুরআন সম্পর্কে একটি প্রচলিত ধারণা হলোঃ এটি একটি উচ্চমার্গের ধর্মীয়, নৈতিক, ঐতিহাসীক বই, যা-তে বড় বড় জটিল ব্যাপারগুলোই শুধু বলা আছে। দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে এমন সাধারণ ব্যাপারগুলোর জন্য কুরআন নয়। যেমন আমরা কিভাবে কথা বলবো, কিভাবে বেড়াতে যাবো, কীভাবে বাচ্চাদের বিছানা দেবÑ এসব খুঁটিনাটি সাধারণ দৈনন্দিন ব্যাপারের জন্য কুরআন নয়। আসলে কী তা-ই? দেখা যাক মানুষের ¯্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা নিজে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য কি শিখিয়েছেনÑ কথা বলা ১) যখন আমি বনী ইসরাঈলদের কাছ থেকে (এ মর্মে) প্রতিশ্রæতি নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো এবাদাত করবে না এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে, আত্মীয় স্বজন, এতীম-মেসকীনদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, মানুষদের সুন্দর কথা বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে; (কিন্তু এ সত্তে¡ও) তোমাদের মধ্যে সামান্য কিছুসংখ্যক লোক ছাড়া অধিকাংশই অতপর ফিরে গেছে, এভাবেই তোমরা (প্রতিশ্রæতি থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে। ২ : ৮৩। ২) হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং (...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন